ডা.স্যামুয়েল হানেমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী
জামুয়েল হ্যানেমান (জার্মান উচ্চারণ) ১৭৫৫ সালের ১০ এপ্রিল জার্মানির সাক্সনী রাজ্যের ড্রেসড্রেন শহরের নিকটে মিশেনে মধ্য রাতের পর জন্ম গ্রহণ করেন। এজন্য ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে কোথাও কোথাও তার জন্ম তারিখ ১১ এপ্রিল বলে উল্লেখিত ও উদযাপিত হয়ে থাকে। তিনি ১৭৯৯ সালে ডক্টরেট অব মেডিসিন বা এম ডি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ২ টি বিয়ে করেন, প্রথম স্ত্রী হলো জোহনা হেনরিয়েটি লিওপোলডিনি কুসলার ও দ্বিতীয় স্ত্রী মেরী মেলানী ডি. ঘারভিলী।
তাঁর পিতা ক্রিশ্চিয়ান গটফ্রায়েড হ্যানেমান (ঈযৎরংঃরধহ এড়ঃঃভৎরবফ ঐধযহবসধহহ)চীনামাটির পাত্রের জন্য বিখ্যাত শহর মিশেন এ একজন চীনামাটির পাত্রের ডিজাইনার ও পেইন্টার ছিলেন। তিনি(হ্যানেমান) পিতা মাতার ৫ জন সন্তানের মধ্য ৩য় এবং মেধাবী ছিলেন। শিশু বয়সেই বিজ্ঞান ও ভাষা শিক্ষায় অকৃত্রিম দক্ষতা প্রদর্শন করেন।

মাতা- জোহানা ক্রিশ্চিয়ানা (ঔড়যড়হহধ ঈযৎরংঃরধহধ) ছিলেন তার পিতার দ্বিতীয় স্ত্রী। তার গর্ভে স্যামুয়েল হ্যানেমান ছাড়াও অগাস্ট হ্যানেমান (অঁমঁংঃ ঐধযহবসধহহ), চার্লোটি হ্যানেমান (ঈযধৎষড়ঃবব ঐধযহবসধহহ) ও মিনা হ্যানেমান (গরহহধ ঐধযহবসধহহ) নামে এক ভাই ও দু’ বোনের জন্ম হয়।

দাদা- ক্রিস্টফ হ্যানেমান (ঈযৎরংঃড়ঢ়য ঐধযহবসধহহ) তিনি জার্মানির লচেস্টেডে রং-তুলির কাজ করতেন।

যুবক বয়সেই হ্যানেমান বিভিন্ন ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি একাধারে ইংরেজি, ফরাসি, ইতালীয়, গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষার দক্ষতা লাভ করেন এবং শেষ পর্যন্ত অনুবাদক ও ভাষার শিক্ষক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি এ ছাড়াও “আরবি, সিরিয়াক, চ্যাডউইক এবং হিব্রু” ভাষাতে দক্ষতা অর্জন করেন।

স্যামুয়েল হ্যানেমান এর বাল্যশিক্ষা ও লেখাপড়ায় হাতে খড়ি হয় বাবা-মায়ের কাছ থেকে। ১৭৬৭ সালের ২০ জুলাই ১২ বছর ২ মাস ১০ দিন বয়সে তাকে মিসেনের ’টাউন স্কুলে’ ভর্তি করা হয়। অতঃপর তিনি ১৭৭৪ সালের ২০ নভেম্বর ১৯ বছর বয়সে ফার্স্টেন অ্যাডল্যান্ডে স্কুল সেন্ট আফ্রা স্কুল তে ভর্তি হন। এখানে তিনি হিপোক্র্যাটিসের লেখার সাথে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি ল্যাটিন, গ্রীক ও হিব্রু ভাষা এবং ইতিহাস, পদার্থবিদ্যা ও উদ্ভিদবিদ্যা শিক্ষা করেন। চিকিৎসা বিদ্যা ছিল তার প্রিয় বিষয়। ১৭৭৫ সালে বিশ বছর বয়সে তিনি লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি এ প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা ও কম সুযোগ সুবিধার জন্য অসস্তি বোধ করেন। মেডিসিন শিক্ষার্থীদের জন্য লিপজিগে না ছিল ক্লিনিক, না ছিল হাসপাতাল। হ্যানেমান লিপজিগে ঔষধ নিয়ে দুই বছর পড়াশোনা করেন।
পরবর্তীতে ১৭৭৭ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার লিওপোল্ডস্টট জেলার ব্রাদার্স অব মার্সি হাসপাতালে চিকিৎসা বিদ্যা শিখতে আসেন। এছাড়াও প্রখ্যাত চিকিৎসক জে ভন কোয়ারিনের প্রত্যক্ষ সহানুভূতি লাভ করেন। তার কাছে হাতে কলমে রোগী দেখার শিক্ষা পান। এ হাসপাতালে নয় মাস থাকার পর ছাত্রাবাস হতে হ্যানেমানের অর্থ চুরি যাবার ফলে ও দারিদ্রতার কারণে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়। তখন প্রফেসর জে ভন কোয়ারিনের সহযোগিতায় তিনি ট্রানসেলভ্যানিয়ার গর্ভনর ব্যারণ এস ভন ব্রউঁকেনথল এর সাথে হার্মানস্ট্যাটে চলে যান। এখানে তিনি গভর্নরের মুদ্রা ও চিত্রকর্মের সংগ্রহশালার তত্ত¡াবধায়ক, লাইব্রেরিয়ান ও পারিবারিক চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন ও ব্যাপক পড়াশুনার সুযোগ পান। এরপর আবার ১ বছর ৯ মাস পরে ১৭৭৯ সালে এরর্ল্যাঞ্জেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। এখানে তিনি হেফ্রাথ স্কেবারের কাছে এসে উদ্ভিদবিদ্যায় পারদর্শী হন এবং ১৭৭৯ সালের ১০ ই আগস্ট চিকিৎসাবিদ্যায় ডক্টরেট অব মেডিসিন বা এম.ডি ডিগ্রী লাভ করেন। এ ডিগ্রী লাভের জন্য হ্যানেমান “ আপেক্ষিক রোগের কারণ ও এর চিকিৎসা” (ঈড়হংঢ়বপঃঁং ধফভবপঃঁঁস ংঢ়ধংসড়ফরপড়ৎঁস ধবঃরড়ষড়মরপঁং বঃ ঃযবৎধঢ়বঁঃরপঁং)বিষয়ে ২০ পৃষ্ঠা ব্যাপী একখানা ছাপানো গবেষণাপত্র পেশ করেছিলেন।

চিকিৎসা জীবনের শুরু অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি দিয়ে। তিনি লক্ষ্য করলেন যে চিকিৎসার পর চিকিৎসিত রোগী উপশম হয়ে কিছুদিন পর আবার সমলক্ষণ বা তার চেয়ে ভয়ংকর লক্ষণ নিয়ে হাজির হন। যা তাঁর বিবেক কে নাড়া দেয়, কারণ তাঁর বাবার উপদেশ ছিল চিন্তা-ভাবনা করে সত্যপথ গ্রহন করতে আর অসত্য পরিত্যাগ করতে। তিনি এ চাপাপড়া অ্যালোপ্যাথিক পদ্ধতি ছেড়ে দিতে মনস্থ করেন। অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন-
“এই সকল অজানা চিকিৎসা পদ্ধতি দ্বারা আমাররোগভোগকারী ভাইদেরকে চিকিৎসা করতে আমার বিবেক আমাকে সহজেই অনুমোদন দেয়না। এ চিকিৎসা করতে গিয়ে এমনদিকে যাচ্ছিল যেন, আমি একজন অনিষ্টকারী, খুনি অথবা মানুষের অমঙ্গলসাধক, সুতরাং আমি আমার বিয়ের প্রথম বছরেই এই ভয়ানক চিকিৎসা পদ্ধতি ছেড়ে দেই এবং নিজেকে রসায়নশাস্ত্র ও অনুবাদকের কাজে নিয়োজিত করি”

হোমিওপ্যাথির আবিস্কার

১৭৮৪ সালের দিকে চিকিৎসা পেশা ছেড়ে দেবার পর হ্যানেমান জীবিকা নির্বাহ করতে ;অনুবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতে মনস্থ করেন ও উইলিয়াম কালনের মেটেরিয়া মেডিকা অনুবাদ করতে শুরু করেন। উইলিয়াম কালনের “এ ট্রিয়েট্রাইজ অন মেটেরিয়া মেডিকা” (অ ঞৎবধঃরংব ড়হ ঃযব গধঃবৎরধ গবফরপধ) বইটি অনুবাদ করার সময় হ্যানেমান লক্ষ্য করেন যে, পেরুভিয়ান বার্ক থেকে তৈরী ম্যালেরিয়া (সধষধৎরধ) জ্বরের জন্য “সিঙ্কোনা” (পরহপযড়হধ) নামক গাছের ছাল-স্থুল মাত্রায় গ্রহন করলে কম্প জ¦রের সৃষ্টি করে এবং লঘু মাত্রায় গ্রহন করলে কম্পজ¦র উপশম হয়। এ কথায় অনেকের দৃষ্টি পড়েছিল কিন্তু কেউই গুরুত্ব দেননি। হ্যানেমান একমাত্র ব্যক্তি বিশ্বাস করলেন এবং তিনি “সিঙ্কোনা” (পরহপযড়হধ) গাছের বাকল এর কার্যকারীতা নিজ দেহে পরীক্ষা করা শুরু করলেন। দেখলেন যে এটা ম্যালেরিয়ার মত তার দেহে কম্পজ্বর উৎপন্ন করছে এবং এটা যে কোন সুস্থ দেহেই করতে সক্ষম। এ বিষয়টি তাকে একটি মৌলিক নীতির দিকে ধাবিত করে “ যা একজন সুস্থ ব্যক্তির উপর প্রয়োগের ফলে বিভিন্ন লক্ষণ সমষ্টি উৎপন্ন করতে পারে। একই রকম লক্ষন সমষ্টি সমৃদ্ধ অসুস্থ দেহে “সিঙ্কোনা” প্রয়োগ করলে সে অসুস্থ দেহ নিরাময় করতে সক্ষম” এটাই “লাইক কিউর লাইক” (ষরশব পঁৎবং ষরশব/ ঝরসরষরধ ঝরসরষরনঁং ঈঁৎবহঃবৎ ) । যা একটি নতুন ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির প্রবর্তন করে এবং তিনি এর নাম দেন হোমিওপ্যাথি। ১৮০৭ সালে হুফেলান্ড (ঐঁভবষধহফ) জার্নাল এ প্রকাশিত ইন্ডিকেশনস অব দ্যা হোমিওপ্যাথিক ইমপ্লয়মেন্ট অব মেডিসিনেস ইন অর্ডিনারি প্র্যাকটিস (ওহফরপধঃরড়হং ড়ভ ঃযব ঐড়সবড়ঢ়ধঃযরপ ঊসঢ়ষড়ুসবহঃ ড়ভ গবফরপরহবং রহ ঙৎফরহধৎু চৎধপঃরপব) নামে এক প্রবন্ধে হ্যানেমান প্রথম “ হোমিওপ্যাথি” (ঐড়সবড়ঢ়ধঃযু) শব্দটি ব্যবহার করেন। ২৫০০ বছরের চিকিৎসা ইতিহাসে শুধুমাত্র আলব্রেচ ফন হেলারই বুঝতে পেরেছিলেন যে, এটাই প্রাকৃতিক পদ্ধতি, অত্যন্ত প্রয়োাজনীয় এবং সঠিক ঔষধ প্রয়োাগ পদ্ধতি। যা মানুষের সঠিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে এবং হ্যানেমান তার পরবর্তী ব্যক্তি যিনি আবার এই প্রাকৃতিক পদ্ধতি চালু করেছিলেন। হ্যানেমান পুরাতন চিকিৎসা পদ্ধতি অ্যালোপ্যাথিকে ওল্ড স্কুল এর চিকিৎসা পদ্ধতি বলে অভিহিত করতেন। তিনি ১৭৯২ সালে টুরিংগেন জংগলে জর্জেন্থল এর পাগলা গারদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এখানে হ্যানেমান হ্যানোভার মন্ত্রী ক্লকেন ব্রিং এর বিষাদ উন্মাদ চিকিৎসা করেন। এ সময় তিনি রক্তমোক্ষণকারী চিকিৎসা ব্যবস্থা ও মানসিক রোগীর চিকিৎসার নির্যাতনমূলক পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করেন।
রচনাসম্ভার

১) ফ্রাগমেন্ট দ্য ভিরিবাস মেডিকামেন্টোরাম পজিটিভিজ সিভ ইন ন্যানোকর্পোরি হিউম্যানো অবজার্ভেটিস-১৮০৫
২)অর্গানন অব আর্ট অব হেলিং -১৮১০ যা পরবর্তীতে অর্গানন অব মেডিসিন নামকরন হয়
৩) মেটেরিয়া মেডিকা পিউরা-১৮১১.
৪) রেপার্টরিয়াম -১৮১৭.
৫) ক্রণিক ডিজিজেস, দেয়ার পিকিউলিয়ার নেচার এন্ড হোমিওপ্যাথিক কিউর -১৮২৮.
৬) স্ক্রফিউলা ক্ষত ও এর চিকিৎসা
৭) যৌন রোগে সার্জনদের প্রতি নির্দেশনা -১৭৮৯.
প্রবন্ধ
১) ডা. ক্রেব এর চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা -১৭৮১.
২) পুরাতন ক্ষত ও আলসার রোগের নির্দেশনা -১৭৮৪.
৩) চিকিৎসা বিদ্যার পুনর্জন্মের প্রয়োজন
৪) আর্সেনিকের বিষক্রিয়া, এর চিকিৎসা ও বিচার বিভাগীয় সত্য উদঘাটন -১৭৮৬.
৫) পিত্ত ও পিত্তপাথুরী ৬) পচন নিরোধক একটা অসাধারণ শক্তিশালী ঔষধ -১৭৮৮.
৭) স্বাস্থ্যের বন্ধু-১৭৮৯.
এছাড়াও যা উল্লেখ যোগ্য
১.ঔষধ প্রভিং রিপোর্টের ওপর লেখা ১০ খন্ড বই।
২) রসায়ন ও চিকিৎসা বিদ্যার ওপর লেখা ৭০টি মৌলিক রচনা।
৩) ২৪ জন লেখকের ইংরেজি, ল্যাটিন, ফরাসি ও ইতালীয় ভাষার লেখা থেকে জার্মান ভাষায় অনূদিত ২৩ খানা বইয়ের সর্বমোট ৩২ খন্ড রচনা সম্ভার।
৪) রোগীর কেস রেকর্ড বই-৫৪ টি।

পারিবারিক পরিচিতি
ঋধসরষু উবঃধরষং

প্রথম স্ত্রী জোহনা হেনরিয়েটি লিওপোলডিনি কুসলার যাকে হ্যানেমান ২৮ বছর বয়সে বিবাহ করেন, তখন হেনরিয়েটির বয়স ছিল ১৯ বছর। ১৭৮২ সালের ১৭ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। এঁর গর্ভে হ্যানেমানের ৯ কন্যা ও ২ পুত্রের জন্ম হয়।
মেলানি ডি হারভিলি
দ্বিতীয় স্ত্রী মাদাম মেরী মেলানী ডি. ঘারভিলী । হ্যানেমান ৮০ বছর বয়সে বিবাহ করেন, তখন ম্যালানী ডি. হারভিলীর বয়স ছিল ৩২ বছর, ১৮৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারী তাদের বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুন্দরী, ধনবতী, বিশিষ্ট চিত্রকর ও নামকরা কবি। হ্যানেমানের জীবনের চরম সাফল্যের দিনগুলিতে তিনি সুযোগ্য সহধর্মিণী হিসেবে যথেষ্ট অবদান রাখেন। শেষ জীবনে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সেবা প্রদান করতেন।
১) প্রথম কন্যাঃ হেনরিয়েটির গর্ভে ২ ছেলে ও ২ মেয়ে জন্ম গ্রহণ করে।
২) প্রথম পুত্রঃ ফ্রেড্রিক , তিনি ভাই বোনদের মাঝে দ্বিতীয় এবং হ্যানেমানের প্রথম ছেলে। শিশুকালে রিকেট রোগের কারণে তার বুক উচু ও মেরুদন্ড বাঁকা হয়ে যায়। তিনি ১৮০৮ সাল থেকে লিপজিক বিশ^বিদ্যালয়ে পড়তেন এবং ২৬ বছর বয়সে চিকিৎসা বিদ্যায় ‘ডক্টরেট ডিগ্রী’ এম.ডি লাভ করেন। তিনি হল্যান্ড ও হামবুর্গে চিকিৎসা করার পর ইংলেন্ডে চলে যান। কিন্তু ১৮২৮ সালের পর তাকে আর পাওয়া যায় নি।
৩) ভিলহেলমিনি ইনি হ্যানেমানের দ্বিতীয় কন্যা, তার গর্ভে এক পুত্রের জন্ম হয়।
৪) অ্যামেলি , অ্যামেলি ছিলেন হ্যানেমানের তৃতীয় কন্যা। তার প্রথম বিবাহ হয় ডা. লিওপোল্ড সাসের সঙ্গে। তার ঔরসে লিওপোল্ড সাস হ্যানেমান (১৮২৬-১৯১৪) নামে এক পুত্রের জন্ম হয়। তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ছিলেন।চিকিৎসা করতেন ইংল্যান্ডের ভেন্টরে। পরবর্তীকালে অ্যামেলি দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন লিবে নামক এক মিল পরিদর্শক কে। কিন্তু লিবে তাকে পরে তালাক দেন।
৫) ক্যারোলিনি হ্যানেমানের এ চতুর্থা কন্যা অবিবাহিতা অবস্থায় ১৮৩১ সালের পূর্বে আততায়ীর হাতে নিহত হয়।
৬) আর্ণষ্ট একই বছর জন্ম ও মৃত্যু। হ্যানেমান যখন মোল্সক্লিবেন থেকে পিরমেন্টে যাচ্ছিলেন তখন মূলহৌসেন নামক স্থানে শকট ( ঘোড়া গাড়ী) দুর্ঘটনায় তার এ দ্বিতীয় পুত্রের মৃত্যু ঘটে।
৭) ফ্রেড্রিকি- হ্যানেমানের পঞ্চমা কন্যার দু’বার বিয়ে হয়। আততায়ীর হাতে তিনি মারা যান।
৮) হ্যানেমানের পঞ্চমা কন্যা (১৭৯৫) ফ্রেড্রিকির সাথে অপর এক জমজ কন্যা মৃত অবস্থায় জন্মেছিল।
৯) ইলিওনোরি- তিনি হ্যানেমানের সপ্তম কন্যা। তার দুইবার বিয়ে হয়েছিল, প্রথম স্বামীর নাম হের ক্লেমান । দ্বিতীয় স্বামীর নাম ডা. উলফ । তবে পরে ডা. উল্ফ তাকে তালাক দিয়েছলেন। ইলিওনোরি হোমিওপ্যাথিক এ্যাডভাইসর ফর দ্যা হোম (ঐড়সড়বড়ঢ়ধঃযরপ অফারংড়ৎ ভড়ৎ ঃযব ঐড়সব) পুস্তক প্রকাশ করেন।
১০) চার্লেটি -হ্যানেমানের অষ্টমা কন্যা চার্লেটি অবিবাহিতা ছিলেন।
১১) লুুইসি -হ্যানেমানের নবমা কন্যা। হ্যানেমানের সহকারী ডা. মসডর্ফের সাথে লুইসির বিয়ে হয়। কিন্তু মসডর্ফ তাকে তালাক দেন। হ্যানেমানের দ্বিতীয় স্ত্রী মাদাম মেলানী ডি. হারভিলির গর্ভে কোন সন্তান জন্মেনি।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে অন্যতম অবদান
১৮০১ সালে আরক্তজ¦রের প্রতিষেধক হিসেবে তিনি “ বেলেডোনা” ব্যবহারের উপদেশ দেন। প্রুশিয়ার সরকার এটা সব চিকিৎসক কে ব্যবহার করতে নির্দেশ দেন। এছাড়াও হ্যানেমান ১৮১৩ সালে জার্মানিতে টাইফাস ও হসপিটাল জ¦রে যথাক্রমে “ব্রায়োনিয়া ও “রাসটক্স” ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
তিনি হোমিওপ্যাথির উন্নয়নে যে সকল পদ্ধতি প্রচলন করেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
১) পরীক্ষামূলক ও আরোগ্যকারী সদৃশবিধানে প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি (সিমিলিয়া-সিমিলিবাস-কিউরেন্টার)
২) সুস্থ মানব দেহে ঔষধ পরীক্ষা করে ঔষধের কার্যকরী ক্ষমতা নির্ধারণ
৩) চিকিৎসা ক্ষেত্রে জীবনীশক্তি তত্তে¡র আবিস্কার
৪) রোগ সংক্রমণ তত্ত¡ ও কলেরার কারণ প্রসংঙ্গে জীবাণুতত্তে¡র পূর্বাভাষ
৫) চির বা স্থায়ী রোগ তত্ত¡,
৬) অপরাধ তত্ত¦ ও অপরাধ প্রবণতা,
৭) রোগীর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা পদ্ধতি,
৮) মানসিক রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি ও নির্যাতনমূলক চিকিৎসার বিরোধিতা,
৯) ঔষধের শক্তিকরণ ও নতুন শক্তিকরণ পদ্ধতি (৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি),
১০) ঔষধকে শক্তিকৃত ও অবিমিশ্রিত অবস্থায় সূ² পরিবর্তিত মাত্রায় প্রয়োগ,
১১) পথ্যবিজ্ঞানে নির্দিষ্ট নিয়মনীতি- খাদ্যতত্ত্ব ও পথ্যাপথ্যেও প্রয়োজনীয়তা,
১২) স্বাস্থ্যতত্ত¡ ও নাগরিক স্বাস্থ্য – পাগলাগারদ, এতিমখানা ও জেলের স্বাস্থ্যবিধির দুর্দশা এবং ব্যয়াম সহ স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়মাবলী,
১৩) সার্জারিতে ড্রাই ড্রেসিং ও অস্থি চাঁচন পদ্ধতি,
১৪) পারদকে দ্রবীভূত করা ও এর সূ² উগ্রতাবিহীন প্রস্তুতি ও সফল ব্যবহার, আর্সেনিকের ক্রিয়া প্রসংগ ও চিকিৎসা আইনে রাসায়নের অবদান, মদে ভেজাল নির্ধারণ পদ্ধতি, বিষের ব্যবহার ও সংরক্ষণ বিধি, ব্যবস্থাপত্রের বিধি, ভেষজের জলীয় অংশ নিষ্কাশন, বাষ্পীয় পাতন ও তরল মাধ্যমে ভেষজের নির্যাসের বাষ্পীয়ভবন, টাটকা গাছ থেকে আরক তৈরী, ইত্যাদি। তিনি রোগ ও ঔষধের লাক্ষণিক উৎস আবিস্কার করে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করেন।
সংবিধানঃ তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের জন্য সংবিধান স্বরুপ অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থ রচনা করেন । যা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার আদি -অন্ত , বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করেন। এ বইটিতে ২ টি অংশ ১. থিওরিটিক্যাল ১-৭১ অ্যাফারিজম এবং ৭২- ২৯১ পর্যন্ত প্রাকটিক্যাল অংশ । ইহা তাঁর জীবদ্ধশায় ৬ বার সংস্কার করেন। ৬ষ্ঠ সংস্করণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ৬ষ্ঠ সংস্করনের নবতম পদ্ধতি বা ৫০ সহ¯্রতমিক পদ্ধতির বর্ণনা করেন।
৬ টি সংস্কারণ নীচে দেওয়া হল
সংস্করণ নাম সূত্র সংখ্যা প্রকাশের স্থান ভাষা প্রকাশকাল
১ম সংস্করণ অর্গানন অব র‌্যাশোনাল হেলিং আর্ট ২৫৯ ড্রেসডেন,
জার্মানী জার্মানী ১৮১০
২য় সংস্করণ অর্গানন অব হেলিং আর্ট ৩১৮ ড্রেসডেন,
জার্মানী জার্মানী ১৮১৯
৩য় সংস্করণ ,, ৩১৮ ড্রেসডেন,
জার্মানী জার্মানী ১৮২৪
৪র্থ সংস্করন ,, ২৯২ ড্রেসডেন,
জার্মানী জার্মানী ১৮২৯
৫ম সংস্করণ ,, ২৯৪ ড্রসডেন,
জার্মানী জার্মানী ১৮৩৩
৬ষ্ঠ সংস্করণ অর্গানন অব মেডিসিন ২৯১ লাইপজিগ,
জার্মানী জার্মানী ১৯২১

মৃত্যু:
হ্যানেমান ১৮৪৩ সালের ২ জুলাই রোববার ভোর ৫ ঘটিকার সময় প্যারিসে নিজের ঘরে রুই দ্য মিলান নং -১ স্থানে মৃত্যুবরণ করেন। জীবনের শেষ বিশ ( ডা. হুল ও ডা. ব্রাডফোর্ড এর মতে; দশ) বছর তিনি প্রতি বসন্তে শ্বাস নালীর সর্দি (ইৎড়হপযরধষ ঈধঃধৎৎয)রোগে আক্রান্ত হতেন। জীবনের শেষ মূহুর্তে ১৩ ঘণ্টা ধরে ক্রমান্বয়ে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়ে শ্বাস রোধ হয়ে তার মৃত্যু ঘটে। ১৮৪৩ সালে প্যারিসের মন্টমার্টরী পর্বতের সমাধিক্ষেত্রে তাকে সমাহিত করা হয়।পরবর্তীতে ৫৫ বছর পর ১৮৯৪ সালে তাকে খ্রিষ্টান মতে পিয়র ল্যাসেইসি সিমেটেরিতে দাফন ও বিভিন্ন স্থানে মুর্তিসহ ৯টি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়।

[bookingpress_my_appointments]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *